কিভাবে ব্লগিং করে অনলাইনে আয় করবেন? ব্লগ তৈরীর সকল গাইডলাইন

ঘরে বসে টাকা আয় এখন বেশ জনপ্রিয়। অনলাইনে টাকা আয়ের যতগুলো মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং তুলনামুলকভাবে সহজ একটি প্লাটফর্ম হলো ব্লগিং। সহজ এজন্য যে, এখানে আপনি নিজে বিষয়ে অভিজ্ঞ সেই বিষয় নিয়েই ব্লগিং শুরু করতে পারেন।

বর্তমানে অনেকেই ব্লগিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছে। আমাদের দেশে এটি বেশ সম্ভাবনাময় একটা মাধ্যম। এই পোষ্টে আমরা ব্লগিং শুরুর করার সবগুলো ধাপ বর্ননা করব।

ব্লগিং কি?

ব্লগ হলো একটি অনলাইন ভিত্তিক ওয়েবসাইট যেখানে বিভিন্ন বিষয়ের তথ্যসমৃদ্ধ অনেক পোস্ট, ছবি ও ভিডিও বা অন্য কোন পেইজ থাকে। আমরা অনেক গুরুত্বপুর্ণ তথ্য জানার জন্য সাধারনত গুগলে সার্চ করি। এই ধরুন আপনি আমার এই পোষ্ট পড়ছেন হয়ত গুগলে সার্চ করে যে “কিভাবে ব্লগিং শুরু করব”। আমি ব্লগিং, এসইও, ট্রাফিক ফানেল প্রভৃতি অনলাইন মার্কেটিং সংক্রান্ত অনেক তথ্য এবং টিপস শেয়ার করি আমার এ সাইটে। এটাকে আমার ব্লগিং সাইট বলতে পারেন। এসব বিষয়ে আমি অভিজ্ঞ বলেই আমি শেয়ার করি। ঠিক তেমনি আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে কোন বিষয়ে উপর তথ্য সমৃদ্ধ কোন অয়েবসাইট যদি তৈরী করেন তাহলে সেটিই হবে আপনার ব্লগিং সাইট।

অনেক সময় যে বিষয় নিয়ে ব্লগিং শুরু করবেন সে বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকলেও , অনেক স্টাডি করেও ব্লগিং শুরু করা যায়। এই ব্লগিং এর বেশ কিছু ধাপ রয়েছে। যে ধাপগুলো পর্যায়ক্রমে অনুসরন করে একটা প্রফিটেবল ব্লগিং সাইট তৈরী করতে পারেন।

ব্লগিং সাইটের আয়ের বিভিন্ন উৎস

প্রথমে আমাদের ব্লগিং সাইটের আয়ের বিভিন্ন উৎস নিয়ে জানা থাকা জরুরী। নিম্নোক্ত উপায়ে একটি ব্লগিং সাইট থেকে আপনি টাকা আয় করতে পারবেনঃ

  1. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
  2. বিভিন্ন বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক গুগল, ইযোইক প্রভৃতি থেকে আয়
  3. লোকাল বিজ্ঞাপন
  4. পেইড আর্টিকেল
  5. গেস্ট ব্লগিং
  6. ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি
  7. পেইড রিভিউ
  8. অনলাইন শপ
  9. অনলাইন কোর্স তৈরি
  10. ব্লগিং এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং সার্ভিস
  11. ওয়েবসাইট বিক্রি
  12. মাসিক মেম্বারশিপ সাইট
  13. কনসাল্টিং সার্ভিস

চলুন তাহলে শুরু করি একটা ইনকাম নির্ভর ব্লগ সাইট কিভাবে তৈরী করা যায়।

একটিং ব্লগিং সাইট তৈরী করতে আপনার অবশ্যই নিচের ধাপগুলো অনুসরন করা উচিত।

  • নিশ বাছাই করা
  • ডোমেইন এবং হোস্টিং
  • ওয়েবসাইট তৈরি
  • কিওয়ার্ড রিসার্স এবং কম্পিটিশন পর্যালোচনা
  • ওয়েবসাইটের জন্য আর্টিকেল বা কনটেন্ট তৈরী
  • কনটেন্ট ওয়েবসাইটে পাবলিশ করা
  • ওনপেজ-এসইও
  • ওয়েবসাইটের স্পীড অপটিমাইজেশন
  • ব্লগিং সাইটের জন্য প্রয়োজনীয় টুলস
  • বিভিন্ন বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক সম্পর্কে ধারনা
  • ব্লগিং এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া সেট আপ
  • অফপেজ এসইও
  • বিভিন্ন ট্রাফিক ফর্মুলা

আমরা পর্যায়ক্রমে উপরোক্ত বিষয়গুলো শিখব।

নিশ বাছাই করার পদ্ধতি

ব্লগিং এর প্রথম এবং খুবই গুরুত্বপুর্ণ ধাপ হলো নিশ নির্বাচন করা। অনেকেই নিশ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভুল করে থাকে। ফলে শেষ পর্যন্ত তার ব্লগিং প্রজেক্ট সফলতার মুখ দেখে না। নিশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণঃ

নিজের দক্ষতা অনুযায়ী নিশ বাছাই করুন

আপনি নিজে যে বিষয়ে দক্ষ তা খুব সুন্দরভাবে অন্যের কাছে উপাস্থাপন করা আপনার জন্য সহজ হবে। অনেকে ব্লগিং শুরু করে অন্যের সফলতা দেখে। কেউ হয়ত একটা টেকনোলজি বিষয়ের বিভিন্ন টিপস নিয়ে একটা ব্লগিং সাইট তৈরী করলো এবং প্রতি মাসে সে অনেক টাকা এই সাইট থেকে আয় করল। এখন আপনি যদি তার সফলতা দেখেই এই বিষয়ে অভিজ্ঞ না হয়েও টেকনোলজি বিষয়ের উপর ব্লগিং শুরু করে দেন তাহলে সফল হওয়া আপনার জন্য অনেক কষ্টকর হবে।

তাই আপনি যে বিষয়ে খুব ভালভাবে জানেন, সেই নিশকেই নির্বাচন করতে পারেন।

টার্গেট অডিয়েন্স নির্বাচন

সাধারনত ব্লগিং সাইটের জন্য আমেরিকান অডিয়েন্সকেই টার্গেট করে নিশ নির্বাচন করা লাভজনক। কারন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং অথবা বিভিন্ন বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক যেমন গুগল, ইযোইক প্রভৃতি থেকে আয় খুব বেশী হয়, যদি বেশীরভাগ আমেরিকার ভিজিটর হয়।

এভারগ্রীন নিশ

আমরা অনলাইনে অনেকই সংবাদপত্র পড়ি। এক সপ্তাহ অথবা এক মাস আগের কোন খবর কি আমরা পড়ি? নিত্য দিনের নতুন নতুন খবর পড়তেই আমরা বেশী পছন্দ করি। কোন নিউজ হঠাত করেই ভাইরাল হয়ে যায়। কিন্তু এই ভাইরাল হওয়া নিউজ এক, দুই বা তিন সপ্তাহ পরে পাঠক মহলে খুব একটা সাড়া ফেলে না।

আবার স্বাস্থ্য বিষয়ের অনেক টিপস আমরা অনলাইনে পড়ি। সেটি এক মাস, দুই মাস অথবা এক বছর পরেও তথ্যের আবেদন আমাদের কাছে প্রায় একই থাকে। আপনি যদি নিউজ নিয়ে কোন ব্লগিং করেন তাহলে আপনাকে প্রতিদিন আপডেট করতে হবে।

আবার যদি স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে কোন ব্লগ করেন তাহলে কিন্তু বছরে একবার বা আপডেট না করলেও হবে। তাই এভারগ্রীন নিশ নির্বাচন করা জরুরী। এভারগ্রীন নিশ সেই সকল নিশকে বলা হয় যার আবেদন দীর্ঘ সময়কাল ব্যাপি থাকে। এবং এভারগীন নিশের কনটেন্ট আপডেটের প্রয়োজন কম হয়।

ডোমেইন এবং হোস্টিং

কোন একটা ওয়েবসাইটের নামকে সাধারনভাবে ডোমেইন নাম বোঝায়। আমার এই ওয়েবসাইটের যেমন ডোমেইন নাম হল alauddinworld.com. ডোমেইন নাম ক্লাইন্ট কম্পিউটারকে ওয়েব সার্ভারের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে। একটি ডোমেইন নাম সংক্রান্ত সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে ডোমেইন নেম সিস্টেম।

ইন্টারনেটে লক্ষ লক্ষ ওয়েবসাইট আছে যাদের প্রত্যেকের ডোমেইন নাম আলাদা আলাদা। প্রতিটি ডোমেইন নেম এর একটা ip-address থাকে। এটি মনে রাখতে কষ্টকর বিধায় ip-address কে কনভার্ট করে ডোমেইন নাম আকারে দেখানো হয়।

একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি ব্যখ্যা করা যাকঃ

আমরা কমবেশী সবাই মোবাইল ব্যবহার করি। মোবাইলে নাম্বার সবারই আলাদা আলাদা। যখন আমরা পরিচিত কোন কারও নাম্বার মোবাইলে সেভ করে রাখি, তখন তার নাম দিয়ে সেভ করি। পরবর্তীতে মোবাইলে তার নাম ডায়াল করলেই কল চলে যাবে। ঠিক তেমনি প্রতিটি ip-address কে কনভার্ট করে নাম হিসেবে আমাদেরকে দেখানো হয়। যাতে আমরা নাম দিয়ে ব্রাউজারে সার্চ দিলেই ওয়েবসাইট দেখা যায়।

ডোমেইন কত প্রকার?

ডোমেইন সাধারনত দুই প্রকারঃ

১) টপ লেভেল ডোমেইন (TLD)
২) কান্ট্রি টপ লেভেল ডোমেইন

১) টপ লেভেল ডোমেইন (TLD):

ডোমেইন এক্সটেনসন অনুযায়ী সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত ডোমেইনকেই টপ লেভেল ডোমেইন বলা হয়। যেমন .com, .org, .net এগুলো যখন কোন নামের সাথে যুক্ত হয় তখন সেটিই টপ লেভেল ডোমেইন।

২) কান্ট্রি টপ লেভেল ডোমেইন:

যখন টপ লেভেল ডোমেইন (TLD) এর সাথে কোন দেশের এক্সটেনশন যুক্ত থাকে তাকেই কান্ট্রি টপ লেভেল ডোমেইন বলা হয়। যেমন আমার এই সাইটের ডোমেইন হলঃ alauddinworld.com. এখন এই ডোমেইন এর সাথে যদি .bd যুক্ত করি তাহলে এটি কান্ট্রি টপ লেভেল ডোমেইন হয়ে যাবে।

ডোমেইন কোন কোম্পানী থেকে কিনব?

ডোমেইন কেনার ক্ষেত্রে আমি ডোমেইন রিনিউ করার সময় এর মূল্য কত হবে সেটা প্রাধান্য দেই। কারন অনেকেই ডোমেইন রেজিস্ট্রশনে অনেক ডিসকাউন্ট দিয়ে বিক্রি করে কিন্তু যখন রিনিউ করার সময় হয় তারা অনেক বেশী মূল্য নির্ধারন করে।

কাজেই যেসব কোম্পানী ডোমেইন রেজিস্ট্রশন এবং রিনিউ একই মূল্য রাখে তাদের কাজ থেকে ক্রয় করাই সবচেয়ে ভাল হবে।

আমি namecheap.com থেকে ডোমেইন রেজিস্ট্রশন করি। তাদের ডোমেইন কেনার সুবিধা হল, তারা আপনার তথ্যকে সব ধরনের ট্র্যাকিং থেকে নিরাপত্তা দিবে। যে কেউ ডোমেইনের মালিককে সহজে খুজে পাবে না।

তবে রেজিস্ট্রশনের সময় কম মুল্যে পাওয়া গেলেও ডোমেইন রিনিউ এর সময় তারা বেশ চড়া মূল্য রাখে। এটি তাদের সবচেয়ে বড় অসুবিধা।

বর্তমানে আপনি cloudflare.com থেকেও ডোমেইন রেজিস্ট্রশন করতে পারেন। রেজিস্ট্রশন এবং রিনিউ এর মূল্য তারা একই রাখে।

হোস্টিং কি?

আপনি যখন আমার সাইটে ভিজিট করে এই পোষ্ট পড়ছেন, তখন এই পোষ্টের সব কন্টেন্ট একটি সার্ভার থেকে আপনাকে দেখানো হচ্ছে। আমি যখন নতুন কোন ব্লগ পোষ্ট লিখি তখন টেক্সট, ছবি বা ভিডিও গুলো একটা অনলাইন সার্ভারে জমা রাখি। কোন ইউজার যখন পোষ্টে ক্লিক করে তখন সেই পোষ্ট সংক্রান্ত সব কিছু সার্ভার থেকে ডাউনলোড হয়ে ইউজারের সামনে দেখায়। এই সার্ভারকেই এক কথায় ওয়েব হোস্টিং (Web Hosting) বলা হয়।

Leave a Comment